(ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া) বিদেশি অর্থে চলা ইমামদের বহিষ্কার ও কয়েকটি মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রিয়ার ডানপন্থী সরকার। এ পদক্ষেপকে রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুচনা বলে অভিহিত করছে দেশটির সরকার। অস্ট্রিয়ার এ পদক্ষেপকে ’বর্ণবাদ’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশটির সদ্য নির্বাচিত তরুণ চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কার্জ মন্তব্য করেছেন, ‘রাজনৈতিক ইসলামের’ বিরুদ্ধে নেয়া সমন্বিত ব্যবস্থারই অংশ এই সিদ্ধান্ত। অস্ট্রিয়ার অনেক মসজিদ তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা পরিচালিত।
বিবিসি লিখেছে, গত এপ্রিল মাসে কয়েকজন শিশুকে তুরস্কের সেনাবাহিনীর উর্দি পরিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন গ্যালিপোলি যুদ্ধের অনুকরণে অভিনয় করানো হয়েছিল। গ্যালিপোলির যুদ্ধ তুর্কিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ওই ঘটনায় তৎকালীন রাশিয়ার মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে পরাজিত করেছিল তুর্কিরা। চরমপন্থার সঙ্গে যুক্ত মসজিদ ও ইমামদের চিহ্নিত করতে স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংগঠন আইজিজিওর সঙ্গে কাজ করছে অস্ট্রীয় সরকার।
রয়টার্স জানিয়েছে, অস্ট্রিয়া এখন পর্যন্ত মোট ৭টি মসজিদকে নির্দিষ্ট করেছে। আর বহিষ্কার হওয়ার তালিকায় রয়েছে কয়েক ডজন ইমাম। ডানপন্থী অস্ট্রীয় সরকারের ভাষায়, এই সিদ্ধান্ত ‘র্যাডিকাল ইসলাম’ এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিদেশি অনুদান বন্ধে নেওয়া কর্মসূচির ‘শুরু মাত্র।’
২০১৫ সালে দেশটিতে ‘ইসলাম বিষয়ক আইন’ নামের নতুন বিল পাস করা হয়েছিল। আইনটিতে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিদেশি অনুদান বন্ধ এবং ইসলাম সংক্রান্ত সংস্থাগুলোর জন্য ‘অস্ট্রিয়ার সমাজ ও অস্ট্রিয়ার প্রতি ভালো ধারণা’ প্রচার করার বিধান ছিল। ওই আইন পাসের সময় বর্তমান চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কার্জ মন্তব্য করেছিলেন, ‘রাজনৈতিক ইসলামের সমান্তরাল সমাজব্যবস্থা ও চরমপন্থী প্রবণতার কোনও স্থান নেই এই দেশে।’
অস্ট্রীয় সরকারের বিবৃতি থেকে জানা গেছে, বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া মসজিদগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘গ্রে উল্ভস’ নামের তুর্কি জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সংস্রব রেখে চলা একটি সংস্থার পরিচালনাধীন মসজিদ। বাকি ৬টি মসজিদ আরব অঞ্চলের মুসলমানদের পরিচালনাধীন।
অস্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি লিখেছে, ‘গ্রে উল্ভসের’ সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনটির পরিচালনাধীন মসজিটিতে শিশুদের দিয়ে তুর্কি যোদ্ধাদের চরিত্রে অভিনয় করানো হয়। গ্যালিপোলির যুদ্ধে নিহত তুর্কি সেনাদের চরিত্রে অভিনয়ের এক পর্যায়ে শিশুরা যখন মৃতের অভিনয় করছিল, তখন তাদেরকে তুর্কি পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।
অন্যদিকে আরব মুসলমানদের সংগঠন ‘আরব রিলিজিয়াস কমিউনিটি’ নামের সংগঠনটিকেই বিলুপ্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রীয় সরকার। ওই সংগঠনটি ভিয়েনাতে ৩টি, কারিন্থিয়াতে ১টি এবং অস্ট্রিয়ার অন্যান্য স্থানে আরও ২টি মসজিদ পরিচালনা করে।
অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৮৮ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ মুসলমান। এদের বেশিরভাগই তুর্কি বা তুরস্কে তাদের পরিবারের সদস্যরা থাকেন। অস্ট্রিয়ার এমন সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়গানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। টুইটার বার্তায় অস্ট্রিয়ার সিদ্ধান্তকে তিনি ‘ইসলামোফোবিক, বর্ণবাদী ও বঞ্চনামূলক’ আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘অস্ট্রীয় সরকার তাদের আদর্শিক ধারার সঙ্গে মিলিয়ে যে তৎপরতা শুরু করেছে তা আন্তর্জাতিক আইন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তির নীতি, সংখ্যালঘুর আধিকার এবং সহবস্থানের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
রয়টার্স জানিয়েছে, ‘টার্কিশ ইসলামিক ইউনিয়ন ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশিয়াল কোঅপারেশন ইন অস্ট্রিয়ার’ (এটিআইবি) সঙ্গে জড়িত ৬০ জন ইমামকে বহিষ্কার করা হতে হতে পারে। বিদেশি উৎসের অর্থ গ্রহণ করায় তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংগঠনটির সদস্য ইমামদের ভিসা নবায়ন বন্ধ হয়ে যেতে পারে সরকার।
তবে অন্য একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বহিষ্কারের ঝুঁকিতে থাকা ইমামের সংখ্যা ৪০ জন। এদের ১১ জনের বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং ২ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এটিআইবির মুখপাত্র ইয়াসার এরসয় স্বীকার করেছেন, সংগঠনটির সদস্য ইমামদের বেতন দেয় দিয়ানেট, যা তুরস্ক সরকারের ধর্ম বিষয়ক সংস্থা। ওআরএফ রেডিওকে তিনি জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে আমরা দেশের ভেতর থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ইমামদের বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছি’