মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই আলোচনায় বসবেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে এ বৈঠক থেকে কি চান কিম। সম্প্রতি দেয়া এ বক্তব্যের মধ্যেই এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে। চলতি বছর নববর্ষের ভাষণে বিশ্বের উদ্দেশ্যে কিম বলেন, দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি অর্জন করেছি আমরা। এখন থেকে আমরা আর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে চাই না। এখন উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চাই আমরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, কিমের এ বক্তব্যই প্রমাণ করে বাপ-দাদার মতো বোকা নন তিনি। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য ত্রাণ নয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ চান তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, নিজের স্বার্থেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন চান কিম। আরও অনেকটা সময় উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় থাকতে চান তিনি। আর দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতির ওপরই নির্ভর করছে তার ক্ষমতা। তিন পুরুষ ধরে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এই দেশটিকে শাসন করে আসছে কিম পরিবার। ১৯৫০-৫৩ পর্যন্ত চলা কোরীয় যুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হওয়ার পর গত ৬৮ বছরে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সহোদর দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও প্রতিবেশী মিত্র দেশ চীন ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। অন্যদিকে কিমের বাপ-দাদার নানা ভূল নীতির কারণে ক্রমেই অবনতির শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছে উত্তর কোরিয়া। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হলেও বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে গরীব ও ক্ষুধাপীড়িত দেশগুলোর অন্যতম দেশটি।
নাগরিকরা মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জ্বালানিসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে তারা শিকার হচ্ছেন মানবাধিকার লংঘনের। কিম জং আন ও তার পরিবারের প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য দেখিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে নাগরিকদের। প্রত্যেক নাগরিকের ওপর রয়েছে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি। সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে দেশের অর্থনীতি। বেইজিংয়ে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ চেং শিয়াওহে বলেন, ‘বলতে গেলে দেশটির অর্থনীতি এখন ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে।’
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরই কিম জনসমক্ষে ঘোষণা দেন, পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন তিনি। অধ্যাপক চেং বলেন, ‘এ সময় একসঙ্গে দুটো লক্ষ্য ঠিক করেন তিনি যা একটা আরেকটার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী হতে গিয়ে অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যর্থ হল তার দেশ’।
চলতি বছরের শুরুর দিকে কিম সরকারের আগের নীতি ত্যাগ করে শুধুই অর্থনীতির উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নীতিকে সামনে রেখে এতদিনের জাতশত্রু দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করে পিয়ংইয়ং। চেংয়ের মতো বিশেষজ্ঞদের মতে, কিমের এ সিদ্ধান্ত তার দূরদৃষ্টি আর চৌকস বুদ্ধিরই পরিচায়ক।