উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বহুল আলোচিত শীর্ষ বৈঠক নিয়ে সম্ভাব্য তিন থেকে চারটি তারিখে কথা বিবেচনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে বৈঠকের কয়েকটি স্থানের কথা ভাবছেন তিনি। ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে তিন থেকে চারটি সম্ভাব্য তারিখ বিবেচনা করছি।’ বৈঠকের স্থানের ব্যাপারে ট্রাম্প বলেন, বৈঠকের স্থানের ক্ষেত্রে পাঁচটি স্থান আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। এর মধ্য থেকে একটি স্থান চূড়ান্ত করা হবে।’ ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, কিমের সঙ্গে তার বৈঠক চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে বা জুন মাসের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে শুক্রবার কিমের বৈঠকের পর কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাম্প-কিম বৈঠক হতে পারে। খবর এএফপির।
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বহুদিন ধরে উত্তেজনার সম্পর্ক বিরাজ করছে। পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায় সিউল ও ওয়াশিংটন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কিম ও ট্রাম্প আলোচনায় বসতে রাজি হন। কিম জং উনের সাথে আলোচনায় বসার এক আমন্ত্রণ ট্রাম্প গ্রহণ করার পর সারা দুনিয়ায়ে একটা হৈচৈ পড়ে গেছে। এর গুরুত্ব-তাৎপর্য কতটা তা নিয়ে এখন বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন-কোরিয়া ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাডেন বলছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নিক্সন যখন চীনের চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের সাথে দেখা করেছিলেন – ট্রাম্প-কিম বৈঠকের তাৎপর্য প্রায় তার সাথে তুলনীয়’।
এই প্রথম উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে। কি করে এটা সম্ভব হলো। কেউ বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা মুন জা-ইনের কূটনৈতিক প্রতিভা। কেউ আবার বলছেন ট্রাম্পের বিপজ্জনক চাল দিয়ে খেলায় জিতে আসার ক্ষমতা একে সম্ভব করেছে। তবে বিবিসির সাংবাদিক লরা বিকার বলছেন, এই রাজনৈতিক জুয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়তো কিম জং উনই – যিনি এখন পর্যন্ত কোনো কথাই বলেন নি ।
কিছুদিন আগেও ট্রাম্প এবং কিম জং-উন পরস্পরের উদ্দেশ্যে অব্যাহতভাবে কটু্ক্তি করছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেবেন। তার পর হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে বৈঠক হবার খবর সবাইকে চমকে দিয়েছে। মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, এটা প্রমাণ করে যে আমেরিকার কঠোর নীতিতে কাজ হয়েছে। বৈঠকটি কোথায় কখন হবে সে সম্পর্কে এখনো জানা যাচ্ছে খুবই কম। হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে, এই বৈঠক হবে মে মাসের মধ্যে। কোথা হবে তা ঠিক হয় নি।
ম্যাডেন বলছেন, এ বৈঠক হয়তো উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের মধ্যেকার বেসামরিকীকৃত গ্রাম পানমুনজমে হতে পারে। অন্য আরেক বিশ্লেষক কোরিয়া ওয়ার্কিং গ্রুপের ড. জন পার্ক বলেছেন, বৈঠকটি একটা চীনে বা অন্য কোন নিরপেক্ষ বা তৃতীয় দেশে হতে পারে। কিম যদিও বলেছেন, তিনি ‘পারমাণু অস্ত্র বিলোপের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ’। কিন্তু বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট বলছেন, এটা মনে রাখতে হবে যে, কিম বার বার বলেছেন তিনি তার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবেন না। এ ছাড়া হয়তো উত্তর কোরিয়ায় বন্দী আমেরিকানদের মুক্তি, দু পক্ষের মধ্যে একটা শান্তি চুক্তি এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের মতো বিষয়গুলো উঠতে পারে।
উত্তর কোরিয়া নিশ্চয়ই চাইবে, তাদের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক। তবে কি পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে তা আগে থেকে বলা কঠিন। বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট বলছেন উত্তর কোরিয়ার ওপর এখন এত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে যে তার ফলেই তারা আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য হয়েছে। বেনেট বলেন, ‘এমন খবর বেরিয়েছে যে উত্তর কোরিয়ার হাতে অক্টোবর মাস নাগাদ আর হয়তো কোন নগদ অর্থ থাকবে না । তাই আমার মনে হয় উত্তর কোরিয়া সত্যি সমস্যায় পড়েছে’। কিম-ট্রাম্প বৈঠকের ফল কি হবে সে ব্যাপারে বেনেট বলেন, ‘সম্ভবত দু পক্ষই কিছু ছাড় দিয়ে কিছু পাওয়ার মতো একটা আপোষ রফায় পৌঁছাতে পারবে, এমন সম্ভাবনা আছে। সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে তা হলো বৈঠক হলেও কোনো অগ্রগতি না হওয়া।’