(ঢাকা, বাংলাদেশ) প্রকাশ্যে ঢাকার রাজপথে গাড়িতে তুলে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। আটকের পর ওই যুবক ও গাড়ি চালককে জনতার গণপিটুনি দেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অভিযুক্ত মাহমুদুল হক রনি উচ্চশিক্ষিত এবং দুই সন্তানের জনক। গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কলেজ গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজনের ফেসবুক পোস্টে দেয়া ভিডিওর সূত্র ধরে সকালে ঘটনা জানাজানি হয়।
ওই ভিডিও মুহূর্তে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। দিনভর রনিকে শেরে বাংলানগর থানায় রাখার পর বিকালে ঘটনার শিকার তরুণী মামলা করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাস জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। ওসি জানান, মামলার বাদীর অভিযোগ, শনিবার রাতে তারা দুই তরুণী কলেজগেট এলাকায় মাহমুদুল হকের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯-৫৪১৪) থামিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেন। ওই সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন মাহমুদুলের ব্যক্তিগত গাড়িচালক। কিছু দূর যাওয়ার পর এক তরুণীকে শিশু মেলা এলাকায় নামিয়ে দেয়া হয়। গাড়িতে থাকা আরেকজনকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন মাহমুদুল।
এ সময় তরুণী হাত-পা নাড়ছিলেন। চিৎকার করছিলেন। এ ঘটনা টের পেয়ে রাস্তায় থাকা মানুষজন গাড়ি থামিয়ে চালক ও মাহমুদুলকে পিটুনি দেয়। ওসি জানান, রনিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার গাড়ি চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে রাফি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। একইসঙ্গে ঘটনার ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিও ফেসবুকে দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক লাখ লোক তা দেখেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাফি ফেসবুকে লিখেন, মোহাম্মদপুর, কলেজ গেট সিগন্যালে ঠিক আমার সামনের গাড়িটাতে লক্ষ্য করে দেখি ভেতরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ধস্তাধস্তি করছে এবং গাড়ির ড্রাইভারের গাড়ি চালানোর ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে গাড়িটা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে রাস্তায় তীব্র জ্যাম থাকায় গাড়িটি বেশি দূর যেতে পারেনি। এমতাবস্থায় আমি গাড়ি থেকে নেমে সামনে যেতে যেতে দেখি আরও কিছু লোক গাড়িটির দিকে লক্ষ্য করে এগুচ্ছে। গাড়িটির কাছে যেতেই দেখি ছেলেটি মেয়েটিকে ধর্ষণ করছে। গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে আমরা মেয়েটিকে বাইরে বের করে নিয়ে আসি। পরে অপর পাশের দরজা খুলতেই দেখি অতিপরিচিত সেই ছেলেটি অর্থাৎ বড়লোক বাবার বখে যাওয়া নষ্ট সন্তান। ছেলেটিকে বাইরে বের করতে গিয়ে সহ্য করতে হয়েছে বাজে মদের গন্ধ। আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, অতঃপর বসিয়ে দিলাম ওই জানোয়ারের কানের নিচে আমার বাম হাতের পাঁচ আঙুলের চিহ্ন। এরপর ক্ষুব্ধ জনতা চিলের মতো করে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বাকি দায়িত্ব পালন করলো।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, গাড়ি থেকে বের করার পর রনিকে মারধর করছিল উপস্থিত লোকজন। এ সময় গাড়ির চালক পালাতে চেষ্টা করলে তাকে বেদম প্রহার করা হয়। এক পর্যায়ে নগ্ন অবস্থায় গাড়ির চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আহত অবস্থায় রনিকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার গাড়িতে মদ, মদ পানের গ্লাস পাওয়া গেছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদুল হক রনি জানিয়েছে, গাড়ির মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করায় বেসামাল ছিল সে। এই বেসামাল অবস্থায় সংসদ ভবন এলাকা সংলগ্ন খেজুর বাগান থেকে ‘দুই যৌনকর্মীকে’ গাড়িতে তুলেছিল। তাদের একজনকে মোহাম্মদপুরের কলেজগেট এলাকায় নামিয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে গাড়ির ভেতরে থাকা অপর তরুণীও চিৎকার করছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধস্তাধস্তি করে ওই তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করছিল রনি। এ অবস্থাতেই জ্যামের মধ্যে আশপাশের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে রনিকে আটক করে।
দুপুরে দুই তরুণীর সন্ধান পেয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শেরে বাংলানগর থানায়। বিকালে তাদের একজন মামলা দায়ের করেন। মাহমুদুল হক রনি বন্ধুদের কাছে রনি হক নামে পরিচিত। তার বড় ভাই একজন আইনজীবী। রনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করে ব্যবসা করে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রনি থাকে হাজারীবাগ থানার মিতালী রোডের ধানমন্ডি-১৫ নম্বর বাড়িতে।
প্রায় রাতেই টয়োটা প্রিমিও গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বন্ধুদের সঙ্গে। রাতভর গুলশান, বারিধারা, উত্তরা এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে মদের আড্ডায় বুঁদ হয়ে থাকে রনি। ঢাকার কয়েকজন এমপির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্কের কথা বলে বেড়ায় রনি। রাতে চলাফেরার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে এমন পরিচয় দেয় সে। রনি গাজীপুরের কাপাসিয়ার সুনমানিয়া গ্রামের মৃত ফজলুল হকের পুত্র।