(কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া) সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে নতুন করে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হচ্ছে। নাজিবের করা দুর্নীতির ব্যাপারে সোমবার এক লিখিত অভিযোগের পর তদন্তের ব্যাপারটি নতুন করে সামনে আসছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের সোমবার প্রথম অফিস করেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। প্রথমদিনের এক বৈঠকে সাবেক সরকারের সকল দুর্নীতি তদন্ত করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। অপরদিকে গত রোববার থেকে কুয়ালালামপুরে এক অভিজাত এলাকায় একটি অ্যাপার্ট ব্লকে নাজিবের ব্যক্তিগত বিলাসবহুল বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছে দেশটির পুলিশ। এর আগের দিন নাজিব ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
নাজিবের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ওয়ানএমডিবি নামে একটি রাষ্ট্রীয় প্রকল্প থেকে কয়েকশ কোটি ডলার উধাও করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিকে নির্বাচনে তার ভরাডুবির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। মাহাথির এসব অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব অর্থের বেশিরভাগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদী। মাহাথির বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে নতুন প্রধান নিয়োগ করবেন তিনি। আগের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত অভিযোগ সব তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
এএফপি জানায়, নাজিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন মালয়েশিয়া দুর্নীতি বিরোধী কমিশনের (এমএসিসি) সাবেক একজন কর্মকর্তা। এমএসিসির তদন্ত ও গোয়েন্দা বিষয়ক সাবেক পরিচালক আবদুল রাজাক ইদ্রিস সোমবার ওই অভিযোগ দাখিল করেন। নাজিবের বিরুদ্ধে তিনি দুটি অভিযোগ এনেছেন। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিলাস পূরণের জন্য নিজের ক্ষমতা ও প্রধানমন্ত্রী পদের অপব্যবহার করেছেন নাজিব। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, নাজিব রাজাক এমন সব সম্পদের মালিক হয়েছেন যা গোপন রাখা হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধ উপায়ে বহু অজ্ঞাত সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
আবদুল রাজাক ইদ্রিস তার অভিযোগে বলেছেন, আমি এ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব। যদি আমার আরও একটি রিপোর্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাও দেব। সেটা করা হবে দন্ডবিধির ২১৭ ও ২১৮ ধারায়। সেই অভিযোগ করা হবে পুলিশে। অভিযোগে তিনি আরও বলেন, এমএসিসি যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে সেজন্য আমি আজই অভিযোগ দাখিল করলাম। এমএসিসি প্রধান কার্যালয়ে তিনি রিপোর্ট পেশ করতে প্রবেশ করার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, কেন তিনি এখন এ রিপোর্ট বা অভিযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? জবাবে আবদুল রাজাক দাবি করেন, আগে যদি আমি এই অভিযোগ বা রিপোর্ট পেশ করতাম তাহলে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হতো না।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য ২০০৯ সালে ওয়ানএমডিবি তহবিল গঠন করা হয়।। ওই তহবিলে কয়েক শ কোটি ডলার অর্থ ছিল। এর মাধ্যমে রাজধানী কুয়ালালামপুরকে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পাশাপাশি কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর বেশিরভাগ অর্থ লুট করে তা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ওই তহবিল থেকে অন্তত ৪৫০ কোটি ডলার সরানো হয়েছে এবং এই অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে রিয়েল এস্টেট এমনকি বিলাসবহুল ইয়ট কেনা হয়েছে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে অন্তত একশ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি মামলাও হয়। মার্কিন বিচার বিভাগের দায়ের করা ওই মামলার কাগজপত্রে মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নাম উল্লেখ না করে ‘মালয়েশিয়া অফিসিয়াল ওয়ান বলা হয়। একই সময়ে অর্থ কেলেঙ্কারিতে মালয়েশিয়ায়ও নাজিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। আবদুল রাজাক জানান, ওয়ানএমডিবি প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। নাজিব সেই তদন্ত থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। দুই বছর পর ২০১৮ সালে সেই দুর্নীতির তদন্ত নতুন করে শুরু হল।