(লন্ডন, যুক্তরাজ্য) ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে অনন্য এক জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একে অপরের জীবনসঙ্গী হলেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কল। সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও অভিজাত ৬০০ অতিথির উপস্থিতিতে শনিবার বিয়ের বন্ধনে জড়ান তারা। রাজপরিবারের এই নতুন দম্পতি এখন থেকে পরিচিত হবেন যথাক্রমে ডিউক অব ডাচেস ও ডাচেস অব সাসেক্স হিসেবে।
সাদা ধবধবে পোশাকে বিয়ের জন্য গির্জায় হাজির হন মেগান মেরকেল। আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন বর প্রিন্স হ্যারি এবং তার ভাই প্রিন্স উইলিয়াম। মেগানের বিয়ের পোশাক ধরে ছিলেন প্রিন্স উইলিয়ামের ছেলে প্রিন্স জর্জ। হবু শ্বশুর প্রিন্স চার্লসের হাত ধরে বিয়ের মঞ্চে আসেন মেগান। বাবা থমাস মর্কল চিকিৎসার কারণে মেক্সিকোতে অবস্থান করায় বিয়ের আগ পর্যন্ত সঙ্গী হিসেবে প্রিন্স চার্লসকে পান মেগান। এরপর মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সেন্টারবুরির যাজক জাস্টিন উইলবি তাদের বিয়ে পড়ান।
ছোট নাতির বিয়েতে ছিলেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। একটি ছাদখোলা গাড়িতে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে করে গির্জায় হাজির হন রানী। আর শুরুতেই হেঁটে গির্জার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন দুই ভাই প্রিন্স হ্যারি ও প্রিন্স উইলিয়াম। সে সময় তারা রাস্তায় দুপাশে থাকা ভিড়ের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এর আগে মায়ের সঙ্গে গাড়িতে চড়ে চার্চের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন পাত্রী মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কল।
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগেই দলে দলে অতিথিরা অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করেন। আমন্ত্রিত অতিথি এবং সাধারণ দর্শকও উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে জড়ো হন। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন অপরাহ উইনফ্রে, জর্জ ক্লূনি ও আমাল ক্লুনি, ডেভিড ও ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম ও স্যার এলটন জন।
বিয়ে শেষে উইন্ডসর শহরে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ান নবদম্পতি। সেখানে অতিথিরা তাদের অভ্যর্থনা জানান। সন্ধ্যায় ফ্রগমোর হাউসে হ্যারি – মেগানের সম্মানে দুই শতাধিক ঘনিষ্ঠ অতিথিদের উপস্থিতিতে প্রিন্স চার্লসের উদ্যোগে বিশেষ পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। এই বিয়ে নিয়ে যুক্তরাজ্যজুড়ে চলে তুমুল উন্মাদনা। আর টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বিয়ে দেখেন বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ। বিবিসি জানায়, লন্ডনের উইন্ডসর ক্যাসেলে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় বেলা ১টায় এই দম্পতির বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই বিয়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তবু শনিবার বিয়ের আয়োজন দেখতে অনেক মানুষ উইন্ডসর শহরে হাজির হন। জড়ো হন রাজ পরিবারের শুভাকাঙ্খী ও সমর্থকরা এবং বিশ্ব মিডিয়ার কর্মীরা। সাধারণ অতিথি হিসেবে ১২০০ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদের বেশির ভাগই দাতব্য কাজের জন্য পরিচিত। এই আমন্ত্রিতরা গির্জায় বাইরে প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন।
হ্যারি ও মেগান মার্কলের বহুল আলোচিত এ বিয়েতে ব্রিটিশ সরকারের তিন কোটি পাউন্ডেরও বেশি ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, শনিবারের বিশাল এই অনুষ্ঠানের মোট ব্যয় তিন কোটি ২০ লাখ পাউন্ড বলে জানিয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী প্রতিষ্ঠান ব্রাইডবুক।
এর মধ্যে নিরাপত্তা বাবদই খরচ তিন কোটি পাউন্ডেরও বেশি বলে নিজেদের হিসাবে জানিয়েছে ব্রাইডবুক। তবে অন্যান্যদের হিসাবে নিরাপত্তা বাবদ খরচ দুই কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের কাছাকাছি বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১১ সালে অপর ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের বিয়েতে নিরাপত্তা বাবদ ৬৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (পিএ)।
নিরাপত্তার এই সব খরচ ব্রিটিশ করদাতাদেরই বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ট্যাক্সপেয়ার্স অ্যালায়েন্সের নীতি বিশ্লেষক ডানকান সিম্পসন বলেছেন, ‘রাজকীয় বিয়েটি যুক্তরাজ্যের একটি উত্তেজনাকর সময়। এই দিনটিতে নবদম্পতি এবং অন্যান্য যারা উইন্ডসরে আসেন তারা যেন গণউৎসবেরে এই আবহে নিরাপদ বোধ করেন তার জন্য সবচেয়ে কম খরচে সব ধরনের নিরাপত্তা উদ্যোগ নেয়া হয়।’ বিয়ের বাকি খরচ রাজপরিবার তাদের নিজেদের তহবিল থেকে দেয়া হয়।