আহমেদ আল-হামাদি। গায়ে ছেড়াফাড়া একটা জামা। খালি পা। একটু আগে স্কুল থেকে বের হয়েছে সে। বের হয়েই কাজের খোজেঁ রাজধানী সানার একটি গোরস্থানে। ১৩ বছর বয়সী শিশুটি গোরস্থানের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
সেখানে কবরগুলো পরস্পরের কাছ ঘেঁষে আছে এবং প্রায় প্রতিদিনই সেখানে থাকে শোকার্ত মানুষের ভিড়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে হামাদির মতো অনেক শিশুই স্কুল শেষে গোরস্থানে কাজ করে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারগুলোর শিশুরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ বেছে নিচ্ছে।
ছোট কাঁধে পানির কলসি বহন করে আহমেদ চারাগাছে পানি দেয়। কবরের নামফলক থেকে ধুলো মুছে ফেলার বিনিময়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে যা অর্থ পায় তা দিয়ে পরিবারকে সে সহায়তা করে। আহমেদ বলে, ’আমরা সাধারণত দাফনের জন্য অপেক্ষা করি।’শিশুটি আরও বলে, যদি কেউ মারা না যায় তবে আমরা গোরস্থানে ঘুরাঘুরি ও খেলাধূলা করি।
ইয়েমেনের লাখ লাখ শিশুর মতো আহমেদ স্কুলে টিকে থাকার জন্য লড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ, দারিদ্র ও মহামারি আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশটিতে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। কাল ২৬ মার্চ হুতি বিদ্রোহীদের উচ্ছেদ করতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ইয়েমেনে হামলার শুরুর চার বছর পূর্ণ হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সৌদিতে চাকরি বদলানোর সুযোগ পাচ্ছেন গৃহকর্মীরা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আরব বিশ্বের মধ্যে ইয়েমেনে শিশু শ্রম সবচেয়ে বেশি। শিশুদের জন্য দেশটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মেয়ে শিশুদের বাধ্য হয়ে বাল্য বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং ছেলে শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ইয়েমেনকে শিশুদের জন্য দোজখ হিসেবে অভিহিত করেছে। ২০১৮ সালে দেশটির ৮০ শতাংশ শিশুর ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন দেখা দেয়।
সংস্থাটি জানায়, ইয়েমেনে আনুমানিক ২০ লাখ শিশু তাদের শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। দেশটিতে পাঁচ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে। বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০১৫ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইয়েমেনের অর্থনীতি ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি দারিদ্য্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। চরম দরিদ্র পরিবারগুলো উপার্জনের জন্য তাদের শিশু সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে।
তিন বছর আগে আতিকা মুহাম্মাদ ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। আজ তিনি একটি ছোট মুদি দোকান চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এই গৃহযুদ্ধ সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’ সাবেক এই যোদ্ধা আরো বলেন, ’আমি খুব বেশি কিছু চাই না। রুটি আর চা-ই আমার জন্য যথেষ্ট।’ আমি সৎভাবে জীবনযাপন করি।’
আরও পড়ুন: কাবা শরীফ ধোয়া হলো, অংশ নিলেন সৌদি যুবরাজও
জাতিসংঘ জানায়, ইয়েমেনের ২ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে চার-তৃতীয়াংশ মানুষেরই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। ১ কোটি লোক অনাহারে মারা যাবার ঝুঁকিতে রয়েছে।কোন কোন এলাকার স্কুলের শিক্ষকরা ২০১৬ সাল থেকে তাদের বেতন পায় না। এই অবস্থা সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুই এলাকায়ই চলছে। আহমেদ সৌভাগ্যবানদের একজন। সানায় তার স্কুলটি এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। এলাকাটি হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।