ছাত্রলীগের সম্মেলন: শীর্ষ পদের আলোচনায় খুলনার ৯ জন

বাংলাদেশ লিড নিউজ

(নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা) অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে আগামী ১১ ও ১২ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে দেশের প্রাচীনতম এ ছাত্রসংগঠনটির আগামী নেতৃত্বে। সম্মেলনের দিন ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ঘণীভূত হচ্ছে আগামী নেতৃত্বের নানা হিসাবনিকাশ। সম্মেলন ঘিরে পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ বিরাজ করছে, তেমনি সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা কাজ করছে, বয়সের কারণে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সাবেক হওয়ার ক্ষণ গণনা।

শীর্ষ পদ দুটি পদ-প্রত্যাশীরা চালিয়ে যাচ্ছেন শেষ মুহূর্তের দৌড়-ঝাঁপ। মধুর ক্যান্টিন, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের বাসা-অফিস এবং পার্টি অফিস সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের পদচারণায় মুখর। তারা বিভিন্নভাবে তাদের যোগ্যতা এবং দলের জন্য ত্যাগকে সামনে এনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে গত বুধবার  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে সমাঝোতার চেষ্টা করা হবে। সমঝোতায় নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে,তা প্রেসরিলিজ দিয়েই হবে। আর  না হলে ভোট হবে। তবে যদি দেখা যায়, ভোটের মধ্যে উল্টাপাল্টা আসে, সেটা নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য হবে না।

ছাত্রলীগে মেধাবী নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই উপযুক্ত নেতৃত্ব এবং ছাত্র, যাদের একটি বয়সসীমার বাধা আছে। এই বয়সসীমার মধ্যে সত্যিকার যে ছাত্র ও মেধাবী, তারা যেন নেতৃত্বে আসে সেটাই আমরা চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করবো। যদি দেখা যায় যে, ভোটের মধ্যে উল্টাপাল্টা আসে,সেটা নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা নিশ্চয়ই মাথায় রাখতে হবে।’

এবার প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব হস্তক্ষেপে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলে বহুদিনের ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট ভেঙে যাচ্ছে’বলে মনে করেন ছাত্রলীগের বর্তমান কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পদপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি এতদিন ধরে সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এবার সেখান থেকে বের হতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দাবি অদৃশ্য সিন্ডিকেট মুক্ত নেতৃত্ব বাছাই হোক ছাত্রলীগের জন্য।

আর শেষ মুহূর্তের আলোচনায় যারা শীর্ষ পদের জন্য এগিয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে নয়জনই খুলনা বিভাগের।  এরা হলেন কেন্দ্রীয় কামটির সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম তুহিন, সহ-সভাপতি চৈতালি হালদার চৈতী সাংগঠনিক সম্পাদক শওকতুজ্জামান সৈকত, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ আরিফিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগ, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক পার্থ প্রতিম ঘোষ, সহ-সম্পাদক জাহিদ হাসান জয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স এবং শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার।

এ ছাড়াও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কামটির উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাগর, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসাইন, কবি জসীম উদ্দিন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান ও স্যার এএফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান।

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কামটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, উপ-স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন ও মুহসীন হলের সভাপতি সরকার রায়হান জহির।

বরিশাল অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, আইন সম্পাদক আল-নাহিয়ান খান জয় ও সহ-সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম সোহাগ। সিলেট থেকে আছেন ইউসুফ উদ্দিন খান (সভাপতি, জিয়া হল, ঢাবি) ও আনিসুল ইসলাম জুয়েল (গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক)। ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আলোচনায় রয়েছেন এ বি এম হাবিবুল্লা বিপ্লব (পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক) ও সোহান খান (সহ-সভাপতি)।

উত্তরবঙ্গ থেকে আলোচনায় আছেন উপ আইন সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম, নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ সম্পাদক কামরুজ্জামান বিশ্বাস জিপু ও মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মাহেদী হাসান সানী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে নিয়মিত ও মেধাবী ছাত্র দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করলে ছাত্রলীগ ভালো করবে। মেয়াদপূর্তির ছয় মাসেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন না হওয়ায়, এ বিষয়ে সরব হন সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের এক অংশ। পরে গত ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগকে সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সাইফুর রহমানকে সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ দুই বছর। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার কথা ছিল।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।