(ম্যানিলা, ফিলিপাইন) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কর্মার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের সাবেক শাখা ম্যানেজার মারিয়া সান্তোষ দিগুইতোকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগের প্রত্যেকটিই প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগে ৪ থেকে ৭ বছর করে জেল দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ৩২ থেকে ৫৬ বছর পর্যন্ত জেল খাটতে হতে পারে তাকে। সেই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ফিলিপাইনের মাকাতি রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট বৃহস্পতিবার এ দণ্ড দিয়েছে। খবর রয়টার্সের।
এখন থেকে প্রায় তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে হ্যাকিং করে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের ওই ব্যাংকের একটি শাখায় চলে যায়। তখন ওই শাখার ম্যানেজার ছিলেন মারিয়া দিগুইতো। ২৬ পৃষ্ঠার এক রায়ে আদালত বলেছে, ‘অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে আদালতে দাঁড়িয়ে দাগুইতো সাক্ষ দিয়েছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। ব্যাংকে যে অবৈধ লেনদেন হয়েছে তাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমন্বয় ও সহযোগিতা করেছেন দাগুইতো।’
গত বছরের ৩০শে আগস্ট মায়া সান্তোস দিগুইতোসহ আরও চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ফিলিপাইনের আইন মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত অন্য চারজন হলেন মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার এম ল্যাগ্রোসাস, আলফ্রেড সান্তোস ভারগারা ও এনরিকো তিওডোর ভাসকুয়েজ। অভিযোগের তিন পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, পরবর্তী চারজনের ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করা হয় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে এবং ওই একাউন্টের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের রাজকোষ চুরির অর্থ নগদায়ন করা হয় বা স্থানান্তরিত করা হয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের অফিসার ইনচার্জ সিনিয়র ডেপুটি স্টেট প্রসিকিউটর এমিলি ফি ডেলোস সান্তোষ ওই অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন। এটা অনুমোদন করেছেন প্রসিকিউটর জেনারেল সেভারিনো গানা জুনিয়র।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের মাকাতি সিটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ষড়যন্ত্র করে, পারস্পরিক যোগসাজশে, একে অন্যের সহযোগিতায় ইচ্ছাকৃতভাবে, সজ্ঞানে ওই অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিং নামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক উইলিয়াম সো গো’র অনিয়মিত একাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ ১২ হাজার এক শত ৮৫ দশমিক ৫৪ ডলার। এক্ষেত্রে কাস্টমার বিষয়ক যে রীতিনীতি তা অনুসরণ করা হয় নি।
অনিয়ম জানা সত্ত্বেও তারা ওই অর্থ উইলিয়াম সো গো’র একাউন্টে আসা অনুমোদন করে। এছাড়া সংশ্লিষ্টরা জানতেন এই অর্থ বাংলাদেশে পাচার হওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের অংশ। অর্থাৎ তারা এর মধ্য দিয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। আইন মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে যে, অভিযুক্তরা জানতেন এই কর্মকাণ্ড অন্যায়। এক্ষেত্রে তারা যেসব অন্যায় করেছেন তা হলো: ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাক্ট বা ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছেন।