বাল্য বিয়ে ঠেকাতে মোবাইল অ্যাপস

বাংলাদেশ লিড নিউজ

(ঢাকা, বাংলাদেশ) বাল্যবিয়ে ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশে ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল অ্যাপলিকেশনস বা মোবাইল অ্যাপস। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের নম্বর এ অ্যাপে দিয়ে বোতাম চাপলেই জানা যাবে বর-কনের প্রকৃত বয়স। ইতিমধ্যে কুড়িগ্রামে এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। মোবাইল অ্যাপটি এখন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে। বাল্যবিয়ে রোধে বাংলাদেশ সরকারের সাথে মিলে কাজ করছে এমন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এই অ্যাপটি তৈরি করেছে। এটি ব্যবহার করবেন বিয়ে নিবন্ধনকারী ইমাম বা ঘটকরা ।

সোমবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, অ্যাপটিতে বর বা কনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম নিবন্ধন নম্বর কিংবা স্কুল ছাড়ার সনদের নাম্বার – এই তিনটি নম্বরের কোন একটি দিলেই জাতীয় তথ্য ভান্ডারের তথ্য থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যাবে, বর এবং কনের বিয়ে করার আইনসঙ্গত বয়েস হয়েছে কিনা। কর্মকর্তারা বলছেন, কুড়িগ্রাম জেলায় তারা ইতিমধ্যেই এটি ব্যবহার করে উৎসাহব্যঞ্জক ফল পেয়েছেন।

পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালুর পর ৬ মাসে এই অ্যাপ দিয়ে ৩ হাজার ৭৫০টি বাল্যবিবাহ রোধ করা গেছে বলে দাবি করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল৷ সংস্থাটি বাল্যবিয়ে রোধে এরই মধ্যে ১ লাখ মানুষকে এই অ্যাপ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করছেন এমন সমাজকর্মীরা বলছেন, বাল্যবিয়ের ফলে বেশিরভাগ মেয়েই স্কুল থেকে ছিটকে পড়েন এবং ধষর্ণ-ঝুঁকি, গৃহ নিপীড়নসহ নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয় তারা৷

যেভাবে কাজ করে এই অ্যাপ:

অ্যাপটি কিভাবে কাজ করে তা বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেছেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌম্য গুহ। তিনি বলেন, ‘এটি খুব সহজ। এই অ্যাপটি ব্যবহার করবে প্রথমত বিয়ে রেজিস্ট্রাররা, যারা বিয়ে নিবন্ধন করেন। দ্বিতীয়ত ঘটকরা। আর তৃতীয় গ্রুপ হচ্ছে যারা বিয়ে পড়ান – মুসলিমদের ক্ষেত্রে সেটা ইমাম ও হিন্দুদের ক্ষেত্রে পন্ডিত।’  তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনোমোবাইল ফোনেই অ্যাপটি ব্যবহার করা সহজ’।

কোনো বিয়ে অনুমোদন করতে গেলে এই তিনটি দলিলের যে কোন একটি পরীক্ষা করে দেখার কথা।  বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। সৌম্য গুহ বলেন, কুড়িগ্রামে এই অ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, সেখানে এটি কাজ করছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ বিয়ের ক্ষেত্রে এই অ্যাপটি ব্যবহার করে বয়স যাচাইয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন হাজার মেয়ের বয়স ছিল ১৮ বছরের কম। কাজেই অ্যাপটি যে কাজ করছে, এ থেকেই বোঝা যায়।

সৌম্য গুহ জানান, এ বছরের অগাস্ট মাস থেকে সারা দেশে এই অ্যাপটি চালু করা হবে। অ্যাপটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, ’মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছেন। আমি মনে করি, এ অ্যাপটি তাতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখবে’।

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন বাল্যবিবাহ রোধে মেয়েদের মতামত দেয়ার অধিকারের বিষয়ে আরও বেশি সচেতন করতে এবং আইনগত ফাঁকফোকর বন্ধের প্রতি জোর দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘বিয়ের নিবন্ধন মানুষ এড়িয়েও যেতে পারে, কেননা, এটি বিয়ের সামাজিক বৈধতার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা করে না৷ তাছাড়া নিবন্ধন না করলেও খুব সামান্যই জরিমানা দিতে হয়৷এটা বড় কিছু নয়৷’ আইনজীবী সারা বলেন, ‘আমরা যদি এরকম কিছুকে (অ্যাপ) জাদুকরী সমাধান ভাবি, তাহলে ভুল হব’।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।