(সোহান আহমেদ, স্পোর্টস প্রতিনিধি) খেলোয়ারদের সতর্ক করে দিতে বা বহিষ্কার করার জন্য ফুটবলে রেফারিরা লাল কার্ড বা হলুদ কার্ড ব্যবহার করেন। এই হলুদ কার্ড ও লাল কার্ড ব্যবহারের ধারণা প্রথম এসেছিল ইংরেজ রেফারি কিন অ্যাস্টনের মাথায়। তিনটি বিশ্বকাপে রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন এই কেন অ্যাস্টন। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রচলন হলেও সেখানে কোনো কার্ডের প্রচলন ছিল না। বিশ্বকাপে কার্ডের প্রচলন শুরু হয় ১৯৭০ এর মেক্সিকো বিশ্বকাপ থেকে। তবে ফুটবলে কার্ড প্রচলনের চিন্তা ভাবনা আসে মূলত ১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের ম্যাচে।
ওই ম্যাচে বেশ ভয়ংকর ফাউল করেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক অ্যান্তনি রাতিন। রেফারি রুডি ক্রেইটলেন মাঠ থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেও আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মাঠ ছাড়তে নারাজ। তাতেই বিপত্তি বাঁধে। ম্যাচ রেফারি কিন অ্যাস্টনের হস্তক্ষেপে পরবর্তীতে রাতিনকে মাঠের বাইরে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে রাতিন কে এই শাস্তি দেয়ার জন্য রুডিকে বেশ বিপাকেই পড়তে হয়। কারণ ইংল্যান্ড দলের দুইজন খেলোয়ার মাঠে রাতিনের মতোই অপরাধ করেছিল। তাদের ফাউল টা রাতিনের মতো বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ছিল না এই দাবি করেন রুডি। এই বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তোলে কিন অ্যাস্টন কে। বড় ধরণের ফাউলের জন্য একজন খেলোযারকে মাঠের বাইরে পাঠানো হল। কিন্তু তার চেয়ে কম ফাউল করেছে যে তাকে কিভাবে সতর্ক করা যায়?
এমন করে তিনি বিষয়টি ভাবছিলেন। আর খেলা শেষ হলে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে কিংস্টোন হাই স্ট্রিটে ট্রাফিক সিন্যালে গাড়ি নিয়ে আটকা পড়েন। সিগনাল বাতিগুলোর দিকে আনমনেই চোখ আটকে গেল তার। দেখলেন বাতিগুলো সবুজ থেকে হলুদ এবং হলুদ থেকে লালে রুপান্তরিত হচ্ছে। সবুজ মানে চলতে থাকো। হলুদ মানে সতর্ক হও। আর লাল মানে থেমে যাও। এখান থেকেই মূলত আইডিয়াটি তার মাথায় আসে। মনে মনে তিনি বললেন, খেলার মাঠেও তো এভাবে খেলোয়াড়দের সতর্ক করা যেতে পারে। এরপর তিনি এ প্রস্তাব দেন ফিফার কাছে।
এরপরই ১৯৭০ এ মেক্সিকো বিশ্বকাপে প্রথম ব্যবহার করা হয় এই হলুদকার্ড ও লালকার্ড। ফাউল করলে খেলোয়ারকে সতর্ক করার জন্য হলুদ কার্ড আর সিরিয়াস ধরণের ফাউল করে বসলে মাঠ থেকে বেড়িয়ে যাবার জন্য লালকার্ড দেখানোর প্রচলন শুরু হয়। আর সেবার প্রথম খেলাতেই হলুদ কার্ড পেয়েছিলেন পাঁচজন ফুটবলার। তবে পুরো বিশ্বকাপে কাউকেই লাল কার্ড দেখানো হয়নি। বিশ্বকাপে প্রথম লালকার্ড পেয়েছিলেন চিলির কার্লোস কাজেলি ১৯৭৪ সালে।
আর এই পদ্ধতিতে বিশ্বকাপের বাহিরে প্রথম লালকার্ড দেখানো হয় ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর। প্রথম লালকার্ড পান ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের ডেভিড ওয়াগস্টাভ। অ্যাস্টন উদ্ভাবিত লাল ও হলুদ কার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল খেলার নিয়মের অংশ হয় ১৯৯৩ সালে। তারপর তা ছড়িয়ে যায় পৃথিবীব্যাপী, এমন কি একটু অদল-বদল করে তা ব্যবহৃত হতে শুরু করলো অন্যান্য খেলাতেও।