(ইসলামাবাদ. পাকিস্তান) পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) পারভেজ মোশাররফকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার অনুমোদন দিয়েছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এমন অনুমোদনের কড়া সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ।
আগামী ২৫শে জুলাই দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান পারভেজ মোশাররফ। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাকে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছেন। বলা হয়েছে, ১৩ই জুন মোশাররফ যদি লাহোর কোর্টে শুনানিতে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হন তাহলে তাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হবে।
ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বর পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন মোশাররফ। আদালত থেকে সিনিয়র বহু বিচারপতিকে আটক ও বদলি করেন তিনি। প্রকাশ্যে অবমাননা করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে। ওই ঘোষণাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় ২০০৯ সালের ৩১শে জুলাই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে পেশোয়ার হাইকোর্ট পারভেজ মোশাররফকে আজীবন অযোগ্য ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেন মোশাররফ।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নিসারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারকের বেঞ্চ তার ওই আপিল গ্রহণ করেন। মোশাররফকে অযোগ্য ঘোষণার পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি করাচিতে জাতীয় পরিষদের ২৫০ নম্বর আসনে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। কিন্তু ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বর সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার কারণে ওই বছর তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাখ্যান করেন রিটার্নিং অফিসার।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নিসার বলেন, যদি পারভেজ মোশাররফ মনোনয়নপত্র জমা দেন তাহলে তা গ্রহণ করতে পারেন রিটার্নিং অফিসার। তবে এক্ষেত্রে তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করেন। বলেন, মনোনয়নপত্র গ্রহণ করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে চলমান মামলায়। ২০১৬ সাল থেকে অল মুসলিম লিগ প্রধান জেনারেল মোশাররফ দুবাইয়ে বসবাস করছেন। তবে কোর্ট অনুমতি দিলেও পাকিস্তানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের পাসপোর্ট, আইডি কার্ড ব্লক করা। কোনো দেশেই বৈধভাবে তার যাওয়ার উপায় নেই। রায়ের পর তিনি কীভাবে নিজদেশে ফিরবেন কিংবা আদৌ ফিরবেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সুপ্রিম কোর্টের এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন নওয়াজ শরিফ। শুক্রবার জবাবদিহি বিষয়ক আদালতের (ন্যাব) বাইরে এ বিষয়ে নওয়াজ বলেন, এটা ভাবারও অযোগ্য যে, পারভেজ মোশাররফকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যিনি উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত তেমন একজনকে কী করে এমন অনুমতি দিতে পারেন একজন প্রধান বিচারপতি?
নওয়াজ শরীফ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ’এমন কোনো আইন কি আছে যা দিয়ে সামরিক একজন স্বৈরশাসককে সরকারের উচ্চ পদে বসার ক্ষমতা দেয়া যায়, যিনি উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত, যার বিরুদ্ধে আকবর বুগতি হত্যা মামলা, বেনজির ভুট্টো হত্যা মামলা, বিচারকদের আটকের মামলা, লাল মসজিদে অপারেশন চালানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে? তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে একই আদালত আমাকে আমার নিজস্ব রাজনৈতিক দলের প্রধানের অফিসে বসার অযোগ্য ঘোষণা করেছে। আমাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। যাবজ্জীবন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নওয়াজ বলেন, এটা এমন একটি বিষয় যা আমার বুঝে আসে না। জাতি বিস্মিত এজন্য যে, কীভাবে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত কারো প্রতি আদালত আইন শিথিল করতে পারে। এর অর্থ হল, কেউ যদি আইন অমান্য করে তিনি প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে সরাসরি জামিন পেয়ে যাবেন। যদিও এমন কোনো বিধান আইনে নেই। যখন পারভেজ মোশাররফের জন্য আইনের এই শিথিলতা দেখানো হচ্ছে তখন আমাকে আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে তিন দিন অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।