(রিয়াদ, সৌদি আরব) লোহিত সাগরের উপকূলে একটি নতুন নগর নির্মাণের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান। কিন্তু এ নগর শুধুমাত্র উচ্চবিত্তদের জন্য। যাদের পয়সা আছে তারাই এখানে বাড়ি কিনতে পারবেন। দেশটির মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরেই থাকবে স্বপ্নের এ নগর। খবর রয়টার্সের।
নিওম’নামের এ নগর প্রকল্পটি বিদ্যমান সরকারি কাঠামোর মধ্য থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করবে বলে জানান সৌদি যুবরাজ। এ শহরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল- এটি সম্পূর্ণ সৌরচালিত ও রোবট নিয়ন্ত্রিত। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই শহরটি হবে সামাজিক বিধি নিষেধ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ধর্মীয় রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে সৌদি আরব উদার ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য এ শহরটির পরিকল্পনা করেছে বলেও জানান তিনি। এ নগরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলারের বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। নিওম মেগাসিটি প্রকল্পের অধীনে প্রথমে রাজপরিবারের জন্য পাঁচটি রাজপ্রাসাদ নির্মানের চুক্তি করা হয়েছে।
তবে সাধ্যের মধ্যে নিজের একটি বাড়ি কেনার একটুকরো স্বপ্ন সৌদির বহু নাগরিকের রয়েছে, তা এক রকম অপূর্ণই থেকে যাবে। সরকারি চাকরিজীবী আমের আল হামদিও সেই একই স্বপ্ন দেখেন। আমেরের মতো একই ধরনের আর্থিক সঙ্গতির আরও অন্তত ১২ লাখ নাগরিক তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
৩৫ বছর বয়সী হামদি তার ২ হাজার ৬৭০ ডলার বেতনের বেশিরভাগই ব্যয় করেন ঋণ শোধ করতে যা তিনি বিয়ে ও একটি গাড়ি নিয়েছিলেন। সঞ্চয় দূরে থাক স্ত্রী হানান ও তিন ছেলেমেয়ের সংসার চালাতেই হিমশিম খান হামদি। সৌদিতে ২৫০ বর্গমিটার তথা ২ হাজার ৬৯১ বর্গফুটের একটি বাড়ির দাম ৭ থেকে সাড়ে ৮ লাখ রিয়াল। বাংলাদেশী মুদ্রায় এটা দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকার সমান। এটা দেশটির নিম্ন আয়ের একটি পরিবারের বার্ষিক বেতনের প্রায় ১০ গুন। হামদির মতো যাদের পয়সা নেই তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
এসব নিম্নবিত্তদের জন্য বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণের সুবিধা পাওয়াও অনেকটা কঠিন। সৌদি আরর বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ। এক সময় পেট্রোডলারে সয়লাব ছিল দেশটির অর্থনীতি। বিদেশী এ ডলার দিয়েই কোনো ধরনের করারোপ ছাড়াই একেবারে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বেশিরভাগ নাগরিককেই সেবা দেয়া হত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের পতনশীল মূল্যে সৌদি সরকারের বাজেটে বিপর্যয় দেখা গেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে তেল রফতানির ওপর নির্ভরশীলতা কাটাতে ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে সংস্কারের পথে হাঁটছে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশটি। অর্থনীতির আধুনিকায়নে যুবরাজ মোহাম্মদ ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। তবে ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ অনেকটা জোরপূর্বক এবং দ্রুততার সঙ্গে সংস্কার কর্যক্রম চালাচ্ছেন। সৌদি নাগরিকেরা যুবরাজের এসব কর্মকাণ্ড সন্দেহের চোখেই দেখছেন। ৩০ কোটি ডলার দিয়ে ফ্রান্সে রাজপ্রাসাদ ও ৫০ কোটি ডলার দিয়ে বিলাসবহুল ইয়ট কেনার খবরে সেই সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়েছে।